মো: হাসান, মহেশখালী (কক্সবাজার), ২৮ জুন: লবণচাষী, পানচাষী ও জেলেদের অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আজ শনিবার বিকেল ৪টায় এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিবেশবাদী সংগঠন “ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)” এই জনসভার আয়োজন করে।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ধরার এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব শরিফ জামিল।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ কামিল মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আমিনুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন “ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ধরা”-এর কক্সবাজার জেলা শাখার সদস্য সচিব এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন।
সভায় বক্তারা বলেন, লবণকে কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে উৎপাদকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। চাষিদের সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত করে কৃষকদের মর্যাদায় রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা ও সুবিধা প্রদানের দাবি জানানো হয়। লবণ বিক্রয়ে স্বচ্ছতা আনতে ডিজিটাল মিটার ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি দ্রুত লবণ নীতি প্রণয়ন ও লবণ বোর্ড গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
বক্তারা অভিযোগ করেন, মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ও দালালদের কারণে লবণচাষীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই চক্রান্ত বন্ধ করে দালালমুক্ত লবণ বিপণন ব্যবস্থার দাবি জানান তারা। চাষযোগ্য লবণের জমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার না করার দাবি তোলা হয়। একই সঙ্গে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে সরকারি লবণ ক্রয়ের আগাম নীতিমালা ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
সভায় মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পানকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। পানচাষীদের কৃষকদের মর্যাদা দিয়ে প্রণোদনা ও সরকারি সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া পানের বরজ ও বনাঞ্চলে দেখা দেওয়া অজ্ঞাত রোগবালাইয়ের কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনার দাবি তোলা হয়।
বক্তারা বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে দূষণকারী শিল্পায়ন বন্ধ করে মৎস্যসম্পদ রক্ষা করতে হবে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জেলেদের দখল হয়ে যাওয়া নদী, খাল, জলাশয় ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী “জাল যার জলা তার” নীতি বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
বিশেষভাবে কোহেলিয়া নদী, মহেশখালী চ্যানেলসহ ১২টি শাখা নদী ও খালের সীমানা চিহ্নিত করে দখলদারদের উচ্ছেদ এবং খননের দাবি তোলা হয়। প্রকৃত জেলে শ্রমিকদের তালিকাভুক্ত করে জেলে কার্ড প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়।
বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মহেশখালী একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকা হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং লবণাক্ততা মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। পাশাপাশি সুপেয় পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের দাবি জানানো হয়।
জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জহিরুল হক, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা ধরা-এর সমন্বয়ক শেখ মো. নুরুল আলম এবং গর্জন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাবুদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা ও ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মাতব্বর, কালারমারছড়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ওসমান গনি, মঈনুল ইসলাম (প্রভাষক, বাংলা, আলিম মাদ্রাসা), উজানটিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোহিদুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা নাজমুল হোসেন সিদ্দিকী, এনজিওকর্মী লিয়াকত আলী প্রিন্স এবং কালারমারছড়া বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বোরআন উদ্দিন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মহেশখালী “ধরা”-এর সদস্য সচিব কাইছার হামিদ ও জুয়েল চৌধুরী।
Leave a Reply