এম.হাসান, কক্সবাজার :
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খরুলিয়া তালিমুল কুরআন দাখিল মাদ্রাসায় প্রাক্তন ছাত্রদের মিলনমেলা ও ঈদ পূণর্মিলনী ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঈদের আনন্দঘন এই মিলনমেলায় অংশ নেন ১৯৯৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্ররা। অনুষ্ঠানের শুরুতে হাফেজ আজাদ মুহাম্মদ আরিফ পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ১৯৯৪ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র ও বিশিষ্ট ব্যাংকার মিজানুল কবির।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ১৯৬২ সালে হযরত মাওলানা মোক্তার আহমদ (রহঃ) অত্র এলাকার মুরুব্বি ও যুবকদের নিয়ে প্রথমে বাঁশের বেড়া ও পকপাতার ছাউনি দিয়ে একটি ঘরে এই মাদ্রাসার সূচনা করেন। জমি দান করেন তার ভগ্নিপতি মাওলানা মুজিবুল হক। শুরুর দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে নানা কষ্ট থাকলেও, মৌলানা মোক্তার আহমদ (রহঃ)-এর একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং মেধার মাধ্যমে মাদ্রাসাটি ধীরে ধীরে উন্নতির পথে এগিয়ে যায়।
বর্তমানে মাদ্রাসায় বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞানসহ সাধারণ বিভাগে পাঠদান চলছে। তবে প্রাক্তন ছাত্রদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, এখন ক্বারীর পদ শূন্য থাকায় শিক্ষার্থীরা বিশুদ্ধ কুরআন শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে। এজন্য ক্বারী ও বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনায় প্রাক্তন ছাত্ররা জানান, এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষালাভ করে অনেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক, ইমাম-খতিব, ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা একজন নিঃস্বার্থ ও হক্কানী আলেম ছিলেন।
মাওলানা মোক্তার আহমদ (রহঃ) কক্সবাজার জেলা জামায়াত ইসলামী দলের নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দুবার নির্বাচিত হয়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন এবং মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
বর্তমানে মাদ্রাসায় দুটি তিনতলা ভবন ও একটি পাকা মসজিদ রয়েছে। শিক্ষকরা জানান, হারিয়ে যাওয়া অনেক মুখ আজকের মিলনমেলায় একত্রিত হওয়ায় তারা আবেগাপ্লুত ও আনন্দিত।
অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ছাত্ররা একটি শিক্ষা উন্নয়ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন এবং ২০২৬ সালে মাদ্রাসার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহৎ মিলনমেলা আয়োজনের প্রস্তুতির কথা জানান।
মাত্র ৩ দিনের প্রস্তুতিতে ব্যাংকার মিজানুল কবিরের নেতৃত্বে প্রায় ২৫০ জন প্রাক্তন ছাত্রের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হয়। অনেকে প্রবাস থেকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে জোহরের নামাজের পর দোয়া মাহফিলে মাদ্রাসা, শিক্ষক, ছাত্র, প্রবাসী ও দেশবাসীর জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
স্মৃতিচারণমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন:
সাবেক সুপার মাওলানা আল আমিন, মাওলানা আব্দুল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা মঈন উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, মাওলানা আজিজুল হক, আশরাফুল আজিজ, মিজানুল কবির, জাহাঙ্গীর আলম শামস, আনিসুল কবির, আক্তার হোসাইন, কে এম রহিম উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক ইরফান আজিজ, মুহাম্মদ সালাম ছিদ্দিক, তাহেরুল ইসলাম, ওসামা বিন আমিন, শাহ রিয়াজ, আবু তাহের মিজবাহ, মুসলিম উদ্দিন, রুকন উদ্দিন, মুহাম্মদ ইসমাঈল, খালিদ হাসান প্রমুখ।
Leave a Reply