নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা জব্দ করা বালু নিয়ে নানা বাহানার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি অবৈধভাবে তোলা জব্দ করা বালু নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিলেও তা ২১ দিনের বেশি সময়েও নিলাম দেয়া হয়নি। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন রহস্যজনক কারণে তা স্থগিত রেখেছে।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে জব্দকৃত বালি নিলামে বিক্রি না করে এই বালি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিয়ে দিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই পূর্ব ঘোষিত নিলামটি স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের (জরিপ ও সায়রাত অনুবিভাগের) অতিরিক্ত সচিব সায়মা ইউনুস বলেন, সোমেশ্বরী নদীতে বালি উত্তোলনে যেহেতু উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেখানে নির্দেশনা অমান্য করে তোলা জব্দ করা বালি নিলাম করা যাবে না, এটা আমরা বলেনি। বরং জব্দকৃত বালু নিলামে বিক্রি করে এর অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে এটাই বিধিমালায় বলা আছে। জব্দকৃত বালু নিলামে বিক্রি না করায় ও প্রশাসনের এমন পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে স্থানীয় পরিবেশবাদীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নেত্রকোনা জেলার অ্যাকশন মেম্বার দিলওয়ার খান বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এভাবে নদী থেকে বালি উত্তোলন করা অপরাধের শামিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, সোমেশ্বরী নদীর ভবানীপুর অংশের জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন ১১৫৬ নং পিলারের অংশে সীমানা রক্ষায় জিও ব্যাগ বালি ভর্তি করে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রশাসনের জব্দকৃত বালির কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সেটি তিনি অবগত নন।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ- সোমেশ্বরী নদী থেকেই বালু তোলে এই এ তীররক্ষা প্রকল্পে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে জিওব্যাগ ভর্তি করে ফেলা হয়েছে।
জানা যায়, আমলে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে সোমেশ্বরী নদী তীর রক্ষা প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এরপর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়িত্ব দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড গুডম্যান ও গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ নামক দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেয়। ওই দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখন সোমেশ্বরী নদীর ভবানীপুর অংশের জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন ১১৫৬ নং পিলারের পাশ থেকে ৩৬০ মিটার এস এম কাইয়ুম সাব-কন্টাক্টর ও বিজয়পুরের বিজিবি ক্যাম্প থেকে কামারখালি পর্যন্ত ৪২০ মিটার সাব-কন্টাক্টর সারোয়ার কামাল তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ করছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, বাঁধ নির্মাণের কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে তা প্রকাশ্যে ব্যবহার করছে। অথচ পরিবেশবাদী সংস্থা বেলার রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে সোমেশ্বরী ও মহাদেওসহ জেলার ছয়টি বালুমহালের বালু তোলার বিরুদ্ধে অনেক আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছেন হাইকোর্ট।
দূর্গাপুর উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও নিলাম কমিটির আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিলামের ধার্য তারিখে উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি নিলাম স্থগিতের চিঠি পেয়ে আমি নিলাম কার্যক্রম করিনি। কেন নিলাম স্থগিত হয়েছে সেটি আমি জানি না।
এ ব্যাপারে দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ রেজওয়ানুল কবির বলেন, নিলাম স্থগিতের কারণ সম্পর্কে আমি মোবাইল ফোনে কিছু মন্তব্য করতে পারি না। আমাদের কাছে জেলা প্রশাসন থেকে যেমন নির্দেশনা এসেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি।
Leave a Reply