নুরুল হোসাইন, টেকনাফ:
টেকনাফের শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় অনেকেই পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কেউ জড়িয়ে পড়ছে বাল্যবিবাহে, কেউ হারাচ্ছে জীবনের লক্ষ্য ও স্বপ্ন। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদা, নৈতিকতা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
এই লক্ষ্যেই টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দুই সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি “স্কুল অব এক্সিলেন্স” অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে টেকনাফের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় আত্মোন্নয়ন, নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণমূলক প্রশিক্ষণে।
প্রথম ব্যাচে অংশ নেয়, টেকনাফ টেকনিক্যাল স্কুল, এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহপরীর দ্বীপ হাজী বশির আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়, নবী হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, কানজরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, হ্নীলা আল-ফালাহ একাডেমি, লেদা উচ্চ বিদ্যালয়, হ্নীলা বালিকা বিদ্যালয়, জমিরিয়া মাদ্রাসা, তাহফিমুল কোরআন মাদ্রাসা, খাদিজাতুল কোবরা (স.) মাদ্রাসা ও বেগম লায়লা নূর দাখিল মাদ্রাসার প্রায় ৬৪ জন শিক্ষার্থী। আগামী ১ নভেম্বর থেকে আরো ৮টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।
দুই সপ্তাহব্যাপী এই প্রশিক্ষণের সমাপনী দিনে অংশগ্রহণকারী ১২৪ জন শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট প্রদান করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক শেখ এহসান উদ্দীন।
প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় ক্যারিয়ার প্ল্যানিং, পাবলিক স্পিকিং, বিজনেস আইডিয়া, প্রবলেম সলভিং ও ক্রিটিকাল থিংকিং-এর মতো বাস্তবমুখী বিষয়ে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা তাদের আগামী ১০ বছরের জীবন পরিকল্পনা লিখিতভাবে জমা দেয়, যা এই কর্মসূচির অন্যতম বিশেষ দিক হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
ইউএনও শেখ এহসান উদ্দীনের বক্তব্য
টেকনাফের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী নানা কারণে পিছিয়ে পড়ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করছি তাদের আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বাড়াতে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত হবে বলেন ইউএনও শেখ এহসান উদ্দীন।
শ্যামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আলি আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়, কাটাখালী দাখিল মাদ্রাসা, রিয়াদুল জান্নাহ আলীম মাদ্রাসা, লম্বরী মলকাবানু উচ্চ বিদ্যালয়, রংগীখালী দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা ও শাহ মজিদিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
প্রশিক্ষণের কারিকুলাম ডিজাইন, প্রশিক্ষক সরবরাহ ও সার্বিক সহযোগিতা করেছে Konnect। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় শিক্ষাপ্রেমীরা জানান, “স্কুল অব এক্সিলেন্স” টেকনাফের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। নিয়মিত এ ধরনের কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বগুণ ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তুলবে যা ভবিষ্যতের টেকনাফকে আরও আলোকিত করে তুলবে।