মহসিন মুন্সী, ব্যুরো চীফ, ফরিদপুর।
আমাদের ললাট লিখুনির জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় যেকোনো বড় ঘটনা বা দূর্ঘঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ইঙ্গিত দেন এবং শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএনপি ও এনসিপি পাল্টাপাল্টি ছয় উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। বিএনপি খলিলুর রহমান, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পদত্যাগ চেয়েছে। অন্যদিকে এনসিপি ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. সালেহউদ্দিনের পদত্যাগ চেয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আলোচনার জন্য সরকারকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ছাত্রদল এর ঢাবির এক নেতার হত্যা কে কেন্দ্র করে এবং এশরাক এর মেয়র পদ নিয়ে বিএনপির গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ অন্য কিছু অর্থ বহন করে কি না তা ও আলোচনার দাবি রাখে।
সেনাপ্রধান বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স অ্যাড্রেসে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচিত কয়েকটি ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। তার বক্তব্য ড. ইউনূসের সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। সেনাপ্রধান নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, তিনি মনে করেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। এর আগে সেনাপ্রধান ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারের রয়েছে বলেও তিনি মত দেন। করিডোর প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে এবং যা-ই করা হোক না কেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে সেটা হতে হবে। বন্দরের বিষয়েও তিনি রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নির্বাচিত সরকারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বলে মত দেন। মব ভায়োলেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। তারা তিন উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পদত্যাগ চেয়েছে। সাথে আরো যোগ হয়েছে ইশরাক ইস্যু। বিএনপি ও তাদের সমমনা রা চায় আগে জাতীয় নির্বাচন হোক, স্থানীয় নির্বাচন হবে পরে।
এনসিপি তিন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. সালেহউদ্দিনের পদত্যাগ চেয়েছে। তারা চায় আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক, জাতীয় নির্বাচন হবে পরে।
কেউ কেউ চাচ্ছেন আগে সংস্কার পরে নির্বাচন আবার কারো চাওয়া আগে নির্বাচন পরে সংস্কার। কেউ কেউ আবার চাচ্ছেন সংস্কার ও নির্বাচন একই সাথে চলুক।
এই চাওয়া পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু কিছু চাওয়া অনভিপ্রেত ভাবে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে রূপ নিয়েছে যা যুগপৎ প্রধান উপদেষ্টার উপরে চাপ এবং জনগণের জন্য দুর্ভোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে।
বিগত তিন যুগেও যারা কোনো সাড়াশব্দ করেনি তারাও এখন তাদের দাবি আদায়ে শাহবাগ ব্লক করে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে স্বস্তিতে থাকতে দেবে না বলে আওয়াজ তোলে। তাইতো ড. ইউনূস বলতে বাধ্য হয়েছেন যে তিনি তার লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে পারছেন না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি জাতিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু দেশ যে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, তাতে সেটা সম্ভব হবে না। যেনতেন একটি নির্বাচন করে তিনি তার দায় নিতে চান না। এ কারণে তিনি আর দায়িত্বে থাকতে চাচ্ছেন না।
কেউ কেউ বলেন, “সেনাপ্রধান যা বলেছেন, তা জাতীয় স্বার্থেই বলেছেন। সবাই তো নির্বাচন চায়। তিনিও নির্বাচনের কথা বলেছেন। তিনি এর আগেও এ ধরনের কথা বলেছেন। আমি এখানে তেমন নতুন কিছু দেখছি না। দেশের স্বার্থে সেনাপ্রধান যেকোনো ইস্যুতে কথা বলতে পারেন।”
আবার কেউ বলেন “সেনাপ্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আর্মি রুলসের সরাসরি লঙ্ঘন। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। কোনো ইউনিফর্মধারী অফিসার দিতে পারেন না। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট, তিনি একটি বিকল্প ক্ষমতা কাঠামো তৈরি করতে চাইছেন। তার এ বক্তব্যে অন্য সেনা কর্মকর্তারা উৎসাহিত হতে পারেন, এটা খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা। সেনাপ্রধান যদি রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চান, তাহলে তার উচিত হবে চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। তাঁর বক্তব্য দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। আর এর সুযোগ নিতে পারে ওত পেতে থাকা প্রতিবেশী দেশ। এখানে প্রতিবেশী দেশেরও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।”
কেউ কেউ মনে করেন “অন্য যে কোনো সরকারপ্রধান হলে এই মুহূর্তে সেনাপ্রধানকে কৈফিয়ত তলব করতেন। ড. ইউনূসের উচিত হবে অবিলম্বে সেনাপ্রধানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা।”
ধারনা করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না পরে, সংস্কার বাস্তবায়ন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এ ছয়টি ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী তৎপরতায় দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এসব ইস্যুতে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ফলে আবারও জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আভাস দেখা যাচ্ছে। অসৎ প্রতিবেশী কর্তৃক সীমান্তে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা নিয়মিত ঘটেই চলেছে।
এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞ দের মতামত হচ্ছে দেশপ্রেমিক সকল গোষ্ঠী ও শক্তির ঐক্য ব্যতীত অন্য কোনো পন্থা নেই। দেশের সার্বিক স্বার্থে সকল দেশপ্রেমিক এর উচিৎ সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্যমত গড়ে তোলা। তাঁরা মনে করেন দেশের প্রচলিত ঘূনেধরা সকল ব্যবস্থা (প্রশাসন, আইন, বিচার, নির্বাচন, রাজনীতি, ব্যবসা, বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষা সহ সকল) যথোপযুক্ত সংস্কার করে দেশকে সর্বাধুনিক অবস্থানে উন্নীত করা। সাথে প্রয়োজনীয় সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা।
এই আয়োজনে যদি দেশ ব্যর্থ হয় তাহলে ভবিষ্যত পুর্বের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে!
পুনশ্চঃ আমরা যেন ভুলে না যাই পতিত সরকারের অমানবিক ইতিহাস। সাথে একজন সর্বোচ্চ অসৎ প্রতিবেশীর কথা। প্রয়োজনে শুধু আগামী ৪৮ ঘন্টা ই নয় সারা জীবন সবসময়েই দেশমাতৃকার অতন্দ্র প্রহরী দের সচেতন থাকতে হবে।
Leave a Reply