শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৯ অপরাহ্ন
Headline :
2nd UN World Social Summit concluded with a commitment toward social protection. সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া বইছে, কেউ রুখতে পারবে না, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম সামাজিক সুরক্ষার প্রতি অঙ্গীকার Commitment toward Social Protection.  রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া- দুর্গাপুর) আসনে জামায়াতের বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নেত্রকোনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সাথে দর্পণ টিভির প্রতিনিধির সৌজন্য সাক্ষাৎ গাজীপুরে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বিনিময় শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তি: দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত আইজিপির সঙ্গে আয়ারল্যান্ড এবং ইইউ প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম নুর উন নবীর জানাজা সম্পন্ন, জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল

নেত্রকোনায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

মোঃ খান সোহেল নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা নাভিশ্বাস তুলছেন। অনিয়মিত ও অস্বাভাবিকভাবে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে করুণ। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ ও গবাদিপশু পালন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। মাছ চাষিদের পুকুরের পানি গরম হয়ে যাচ্ছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ফলে মাছের মধ্যে রোগ দেখা দিচ্ছে। খামারিরা বলছেন, গরুর খামারে ফ্যান বা পানির পাম্প চালানো যাচ্ছে না, এতে পশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং দুধ উৎপাদন কমে যাচ্ছেন
জেলার ১০টি উপজেলা, ৮৬টি ইউনিয়ন এবং ২ হাজার ২৮২টি গ্রামের মধ্যে উপজেলা সদরগুলোতে বিদ্যুত সরবরাহ কিছু বেশি থাকলেও দিনে-রাতে মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ মিলছে গ্রামে। অনেকে আইপিএস ও সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করলেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলো চার্জ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক দরিদ্র পরিবার রাত কাটাচ্ছেন মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং হাতপাখার বাতাসে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায় ধস নেমেছে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল ও নষ্ট মিটারের সমস্যা। কলমাকান্দা, খালিয়াজুরী, কেন্দুয়াসহ অন্যান্য উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকেরা জানাচ্ছেন, বিদ্যুৎ না পেলেও প্রতি মাসে পাচ্ছেন ফোলানো বিল।

মোহনগঞ্জের বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম  বলেন, গতরাতে মোহনগঞ্জে তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ ছিল না। শিশু সন্তানরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ঘুমাতে পারেনি। ঘরে বয়স্ক অসুস্থ মা, গরমের জ্বালায় অস্থির।
কলমাকান্দার খারনাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ওয়াবায়দুল হক জানান, আমরা দিনে-রাতে মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই। রাতে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়, কখনও মোমবাতি জ্বালাতে হয়। বাচ্চাদের সামনে পরীক্ষা, গরমে পড়তে পারে না।
খালিয়াজুরীর লেপসিয়া এলাকার বাসিন্দা জুলহাস মিয়া বলেন, সারাদিনে তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। গরমের জ্বালায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
জেলা সদরের ময়মনসিংহের রুহী গ্রামের গরু খামারি শহীদ মিয়া জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় গরুর খামারে ফ্যান চালানো যায় না। গরমে গরুগুলো অস্থির হয়ে ওঠে, পুকুর থেকে পানি এনে ঠান্ডা করতে হয়। মানুষের কষ্ঠের বলে আর লাভ নাই।
অন্যদিকে কেন্দুয়ার বাসিন্দা একটি কিন্ডার গারটেন স্কুলের পরিচালক রোমান খান  অভিযোগ করেছেন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ে শিশুদের পড়াশোনায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। নষ্ট মিটার থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বিল দিচ্ছেন তারা।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আকরাম হোসেন বলেন, জেলায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫৭ মেগাওয়াট, কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০–৬৬ মেগাওয়াট। ফলে চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয়ভাবে বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় আমরা কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, জেলার ৬ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মিটার বিকল রয়েছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি কেন্দুয়া উপজেলায়। সেখানকার ডিজিএম মো. ওমর ফারুক বলেন, মাওনা পাওয়ার স্টেশনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১০–১১ মেগাওয়াট। বাধ্য হয়ে ৯টি ফিডারের মধ্যে ৪টি বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, কেন্দুয়ায় প্রায় ৮ হাজার মিটার বিকল এবং নতুন মিটার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নতুন মিটার সরবরাহ হলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হবে বলে তিনি আশা করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page