স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার:
উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক বাজারে হাজারো অবৈধ দোকান। তবে রোহিঙ্গারা গত ৮ বছর ধরে এসব দোকান থেকে কেনাকাটা করতে পেরে খুবই খুশি।
জানা যায়, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন বিভাগের জমি ছাড়াও নিজস্ব জমিতেও গড়ে উঠেছে একাধিক বাজার। ১৯ ও ১৩ নম্বর ক্যাম্পে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন খতিয়ানভূক্ত জমিও। এসব বাজারে পাওয়া যায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। বিশেষ করে, পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী এলাকায় ১৩ ও ১৯ নম্বর ক্যাম্পে স্থানীয়রা বাজার বসিয়ে জনমনে সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যেহেতু রোহিঙ্গারা নিজ নিজ শেডের পাশে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ ও মাল পেয়ে বাইরে বাজারে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ভিড় করছেনা। অভিযোগ উঠেছে, জনৈক জয়নাল বাহিনীর কিছু চিহ্নিত ক্যাডার ও দখলবাজ নতুন করে বাজার বসাতে গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করে চলছে। এসব অবৈধ বাজারের কারও কাছে বৈধ লাইসেন্স ও কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র না থাকায় স্থানীয় সরকার ও উপজেলা পরিষদকে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ও কর ফাঁকি দিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বাজার হওয়ার পেছনে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের দায় এড়ানোরও সুযোগ নেই। কারণ এসব বাজার বা নতুন করে বাজার বসাতে ক্যাম্প প্রশাসন কাগজে কলমে লিখিত অনুমতি না দিলেও তা বন্ধে কার্যকরি কোন ভূমিকাও দৃশ্যমান নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরনো একটি বাজার গত ৮ বছর ধরে চলে আসছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মুদিদোকান, ফার্মেসি, কাঁচা বাজার, হোটেল, লাকড়ি দোকান, গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান, চায়ের দোকান, মাছ-মাংসের আড়ত, কাপড়, মোবাইল, জুয়েলার্সসহ বিভিন্ন রকমের দোকান বসানো হয়েছে। এতে স্থানীয় হোস্টকমিনিউটির লোকজন কাছে পেয়ে কেনাকাটার সুযোগ পাচ্ছে। উখিয়া টেকনাফ এলাকার রোহিঙ্গা বাজারের বা দোকানের কোনোটিরই নেই বৈধ লাইসেন্স বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। বাজার থেকে আয়কৃত এই বিপুল অর্থের একটি টাকাও রাজস্ব পায়না সরকার। পুরাটাই লুটপাট করে চলে যাচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের পাতিনেতা ও দখলবাজদের পকেটে। শুধু তাই নয়, চাঁদা আদায় এবং দোকান দখল ঘিরে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে নতুন বাজারের পরিচালক একাধিক ইয়াবা মামলায় জামিনে মুক্ত জয়নাল বাহিনীর প্রধান সাবেক মেম্বার জয়নাল বলেন, ৩২টি ক্যাম্পে অন্তত ৬০টিরও অধিক বাজার রয়েছে। কেউ অনুমতি নেয়নি। আমরা বিএনপির লেঅকজন, আমরা বাজার বসালে ক্ষতি কিসের। তিনি বলেন, একটি বাজারের পরিচালনাকারীরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলছে। এ ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পের ভিতর সব বাজার অবৈধ, কাউকে বাজার বসাতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এসব বাজার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বর্তমানে একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে দোকানপাট ও বাজার গড়ে তোলে জায়গাগুলো জবরদখল করে ফেলেছে সুবিধাভোগী স্থানীয় সিন্ডিকেট। ক্যাম্প প্রশাসনের গাফিলতির কারণে নতুন করে এই সরকারি জমি দখল করার সুযোগ পেয়েছে তারা। এখানে রাজনৈতিকদলের কতিপয় নেতা ও পাতি নেতারা বখরা পায় বলে জানা গেছে। বনবিভাগ উখিয়া রেঞ্জের পক্ষ থেকে ৩০-৪০ জনের একটি তালিকা ক্যাম্প প্রশাসনকে জমা দিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, বনবিভাগের জায়গার উপর অবৈধভাবে যে স্থাপনা ও অনুমতিবিহীন বাজার গড়ে উঠেছে, সেসব অভিযান করে উচ্ছেদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ক্যাম্প প্রশাসনকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান চালানো হবে।
এদিকে ১৩ ও ১৯ ক্যাম্প ইনচার্জ আল ইমরান বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, বনবিভাগের সমন্বিত কমিটির সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে উচ্ছেদ করা হবে। এজন্য সবার সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, ক্যাম্পের ভিতর কোন কিছু করার সুযোগ নেই। করা মানে সম্পূর্ণভাবে বে-আইনি। যেহেতু বনবিভাগের জায়গা, সেহেতু তাঁদের থেকে আগেই এই উদ্যোগ নিতে হবে।