উশৈনু মার্মা
থানছি, বান্দরবান।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার ৪নং বলী পাড়া ইউনিয়নে এবার আউশ ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মাঝে নেমে এসেছে আনন্দের জোয়ার। মাঠজুড়ে বাতাসে দুলছে সোনালি শীষ, আর কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিতরণ করা উন্নত জাতের ব্রি-ধান-৪৮ এবার আশাতীত সাফল্য এনে দিয়েছে। ফলে পাহাড়ি দুর্গম জনপদ বলী পাড়া পরিণত হয়েছে উৎসবমুখর এক চাষাবাদ কেন্দ্রে।
রোদঝলমলে সকালে ধানক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ধান কাটছেন, কেউ গাদা বাঁধছেন, আবার কেউবা হাসিমুখে শীষ হাতে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। চারপাশ যেন উচ্ছ্বাসে ভরা এক আনন্দলোক।
স্থানীয় কৃষক হ্লাশৈমং মারমা বলেন,
“দেশি জাতের ধান চাষ করে সবসময় ক্ষতির মুখ দেখেছি। খরচ বেশি হলেও ফলন হত কম। এবার কৃষি অফিস থেকে ব্রি-ধান-৪৮ বীজ পেয়েছি। অল্প সময়ে ধান হয়েছে, শীষে দানা ভরপুর। পরিবারের খরচ মেটানোর চিন্তা কিছুটা হলেও কমেছে।”
ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষাণী হ্লাশৈনু মারমা জানান,
“আমরাও পুরুষদের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছি। ধান ভালো হওয়ায় কষ্ট সফল হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ ধান পেয়েছি। জমিতে পানি না থাকলেও এই জাত ভালো ফলন দিয়েছে। আগামীতে আরও বেশি জমি আবাদ করব।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওয়েনমং মারমা বলেন,
“ব্রি-ধান-৪৮ একটি স্বল্পমেয়াদি ও উন্নত জাত। উৎপাদন খরচ কম, রোগবালাই তুলনামূলক কম হয়। পাহাড়ি এলাকার জন্য এই জাত বেশ উপযোগী। আগামীতে আরও বেশি কৃষককে এই জাত আবাদে উৎসাহিত করা হবে।”
স্থানীয় কৃষকরা মনে করছেন, সরকারি সহযোগিতা নিয়মিত থাকলে পাহাড়ি অঞ্চলে আর খাদ্য সংকট দেখা দেবে না। পর্যাপ্ত উৎপাদন হলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও ধান সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
ফলে দুর্গম বলী পাড়ায় কৃষকরা এখন নতুন স্বপ্ন বুনছেন। মাঠের সোনালি শীষ আর কৃষকের মুখের হাসি মিলেমিশে তৈরি করেছে উৎসবমুখর আবহ।