শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ অপরাহ্ন
Headline :
2nd UN World Social Summit concluded with a commitment toward social protection. সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া বইছে, কেউ রুখতে পারবে না, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম সামাজিক সুরক্ষার প্রতি অঙ্গীকার Commitment toward Social Protection.  রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া- দুর্গাপুর) আসনে জামায়াতের বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নেত্রকোনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সাথে দর্পণ টিভির প্রতিনিধির সৌজন্য সাক্ষাৎ গাজীপুরে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বিনিময় শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তি: দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত আইজিপির সঙ্গে আয়ারল্যান্ড এবং ইইউ প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম নুর উন নবীর জানাজা সম্পন্ন, জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল

বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে জুমের পাকা ধান কাটার ব্যস্ততা

উশৈনু মারমা, থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখন চলছে জুমের ফসল ঘরে তোলার মৌসুম। আকাশে কখনো কালো মেঘের ছোয়া, কখনো হঠাৎ বৃষ্টি আবার কখনো ঝলমলে রোদ—এই প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেই পাহাড়ি পরিবারগুলো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জুম ফসল কাটায়। ঝিরঝির বাতাসে দুলছে সোনালি ধানের শীষ, চারদিকে ফসলের উৎসবমুখর দৃশ্য। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান কৃষি ঐতিহ্য হলো জুম চাষ। শত শত বছর ধরে তারা পাহাড়ের ঢালে জমি পরিষ্কার করে ধান, ভুট্টা, কুমড়া, মরিচ, তিল, হলুদ, মার্ফা, চালকুমড়াসহ নানা প্রকার ফসল একসাথে চাষ করে আসছে। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় “১২ মাসে ১২ ফসলের কৃষি”।

চলতি বছর থানচি উপজেলার প্রায় ৩ হাজার ৯৪৮টি জুমিয়া পরিবার জুমে চাষাবাদ করছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ পরিবারই এখন ব্যস্ত ধানসহ অন্যান্য ফসল কেটে ঘরে তোলায়।

উপজেলার থাওয়াই ম্রো পাড়ার প্রবীণ জুমচাষি মেনরোওয়াত ম্রো (৬৭) দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে জুম চাষ করছেন। তিনি বলেন
“প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে আমরা ধানসহ অন্যান্য সবজি ও মসলার বীজ বপন করি। ভাদ্র মাস থেকে ধান কাটা শুরু হয়। প্রথমে আসে মার্ফা, তারপর ধান, কুমড়া, ভুট্টা, তিল, মরিচসহ নানা ফসল। বছরের শেষে আমরা হলুদ সংগ্রহ করি। তবে গত বছরের মতো এবার ফলন ততটা ভালো হয়নি।”

আবওয়া কার্বারিপাড়ার চাষি ঙুইতং ম্রো বলেন—
“আমরা পরিবার-পরিজন মিলে ধান কেটে নিচ্ছি। তবে ইঁদুর, কাঠবিড়ালি ও বন্যপ্রাণীর উপদ্রবে ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে ফলন আশানুরূপ হয়নি। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, থানচি উপজেলায় ২ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে জুমচাষ হচ্ছে। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়ালীদ হোসেন বলেন
“জুমচাষ পাহাড়ের ঐতিহ্য। এখানকার পাহাড়িরা যুগ যুগ ধরে একই জমিতে ধান, শাকসবজি, মসলা, ফলসহ বিভিন্ন ফসল একসঙ্গে ফলাচ্ছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিত কৃষকদের সার, কীটনাশক ও বীজ বিনামূল্যে দিচ্ছে। পাশাপাশি পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে কৃষকরা ধানসহ সব ফসল সংগ্রহ করবে।”

জুমচাষ শুধু জীবিকার উৎস নয়, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও অংশ। প্রতিটি মৌসুমে নতুন ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তারা আনন্দ-উৎসব পালন করে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, বন্যপ্রাণীর ক্ষতি ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অভাব সত্ত্বেও পাহাড়িদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই ঐতিহ্যবাহী জুমচাষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page