পিপলু মারমা,বান্দরবান:
অদ্য ১২ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে রুমা উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী দেব বৌদ্ধ বিহারের সঙ্গে স্থানীয় বড়ুয়া সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে। এ সমঝোতার মাধ্যমে এলাকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা ও মানসিক বিভক্তি দূর হয়ে আবারও সম্প্রীতির পরিবেশ ফিরে এসেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিতরত সকল দায়ক-দায়িকা ও রুমা কেন্দ্রীয় দেব বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে অষ্টপরিস্কার দানের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থণানুষ্ঠান ও সংঘদানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি রাজস্থলী উপজেলার নাইক্যকছড়া আগা পাড়া বৌদ্ধ বিহারে বিহার অধক্ষ ও নাইক্যকছড়া আগাপাড়া বৌদ্ধ ওয়েলফেয়ার অনাথ আশ্রমে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মায়ানমার সরকার কর্তৃক সাইধাম্মা জ্যোতিকা উপাধিপ্রাপ্ত পরম পূজনীয় ভদন্ত মাহমানীয় খেমাচারা মহাথেরো ভান্তে ও
২। উদলবনিয়া বিহারে বিহারাধ্যক্ষ মহাথেরো ভান্তে,
৩। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন, রোয়াংছড়ি জেতবন বিহারে বিহারাধ্যক্ষ ও সভাপতি, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলার মহাথেরো ভান্তে,
৪। বালাঘাটা বিহারে বিহারাধ্যক্ষ ও মহসচিব, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলার মহাথেরো ভান্তে,
৫। রুমা মিনঝিড়ি পাড়া বিহারে বিহারাধ্যক্ষ মহাথেরো ভান্তে,
৬। বান্দরবান উজানি পাড়া খয়ংফ্যা ক্যং বিহারে বিহারাধ্যক্ষ মহাথেরো ভান্তে,
৭। বান্দরবান রাজগুরু বিহার খয়ংওয়া ক্যং বিহারে বিহারাধ্যক্ষ মহাথেরো ভান্তে,
৮। রুমা অগ্র বংশ অনাথালয়ে নির্বাহী পরিচালক নাইন্দিয়া ভান্তে ও আরো রুমার উপজেলার বাহিরে থেকে আগত অতিথি মহাথেরোর ভান্তেদ্বয়। এবং উসাইমং মারমা, যুগ্ম সচিব, রুমা কেন্দ্রীয় দেব বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিহার পরিচালনা কমিটি, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড ও বিহারের নিজেস্ব জমিতে বসত ঘরের ভিটা স্থাপন কে কেন্দ্র করে, বড়ুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এর কাছে গত ৫ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দে অত্র বিহারে অধ্যক্ষ শারীরিক ভাবে হেনস্থা শিকার হন । এতে করে স্থানীয় মারমা ও বড়ুয়া দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এক বিরাট সাম্প্রদায়িক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর পর ১৯ জন বড়ুয়া সম্প্রদাযের অপরাধীদের আসামী করে ৯ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দে তারিখে রুমা থানায় জিআর মামলা নং – ১১২/২২ তৎকালীন রুমা দেব বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অগ্র বংশ অনাথালয়ের পরিচালক নাইন্দিয়া ভান্তে বাদী হয়ে মামলা রুজু করেন। এবং আসামী দের রুমা থানা পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেন। এর পর থেকে দফায় দফায় রুমার লোকাল প্রশাসন ও পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ অনেক চেষ্টা করেন সমস্যা সমাধান করার। কিন্তু কোন ভাবেই সমাধান করা যাচ্ছিল না যার ফলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ভক্তদের অংশগ্রহণেও শিথিলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল।
তবে সাম্প্রতিক রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আদনান চৌধুরী হস্তক্ষেপে সম্প্রতি রুমা দেব বৌদ্ধ বিহারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গত ২৪ জুন ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে একটি শুনানি আয়োজন করেন। অনুষ্ঠিত শুনানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ এর বান্দরবান জেলার সম্মানিত সভাপতি , বিভিন্ন এলাকার বিহারের ভিক্ষুদ্বয় সহ অত্র উপজেলার মারমা সম্প্রদায়ে গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের গন্যমান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বৌদ্ধ দুই সম্প্রদায় এবং বিহারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চুক্তি সম্পাদন করা হয়। যার ফলে সমস্যা সমাধান করার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ইউএনও। এতে করে দীর্ঘ দিনের ভুল বোঝোবুঝি একটা সমাধানের পথে অগ্রসর হয় ও সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনেন। আলোচনায় উভয় পক্ষে সমঝোতায় পৌঁছায়, এবং সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে।
এই ঘটনায় স্থানীয় বৌদ্ধ ভক্তরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এ সমঝোতা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, সামগ্রিক সামাজিক শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৌদ্ধ সমাজের প্রবীণরা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে না এবং দেব বৌদ্ধ বিহার আবারও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের আস্থা ও ভক্তির কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠবে।
“সাড়ে তিন বছরের জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের পথে এগোলো রুমার দেব বৌদ্ধ বিহার।”