June 22, 2025, 2:13 am

কৃষক সরকারি গুদামে ধানের দাম বেশি পেয়েও ধান বিক্রি করছে না কৃষক

Reporter Name
  • Update Time : Wednesday, May 14, 2025
  • 89 Time View

মোঃ খান সোহেল নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার কৃষি অফিসের জরিপ অনুযায়ী জানা গেছে এই বছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু বাজারের দামের তুলনায় সরকারি গুদামে ধানের দাম বেশি থাকার পরও কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করছে না। কৃষক গুদামে বোরো ধান বিক্রি করার আবেদন করার পরও কেন ধান নিয়ে গুদাম মুখি হচ্ছে না এমন প্রশ্ন উঠেছে । চলতি মাসের ৯ তারিখ খাদ্য নিয়ন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছিলো এই বছর মোট ১০৮৯ মেট্রিকটন ধান কেনা হবে। তার মধ্যে তারা মাত্র ১ টন ধান কিনেছে। কৃষি অফিস কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা ৯ মে বলেছিলো তিনি ১ হাজার ৬ শত ষোল জন আগ্রহী কৃষকের নামের তালিকা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বারাবর পাঠিয়েছেন। কিন্তু খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা তথ্য দিয়েছিলো তিনি ২ হাজার ১০০ শ কৃষকের তালিকা পেয়েছেন। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন দাম বেশি থাকার পরও কৃষক কেন ধান নিয়ে আসছে না বুঝতে পারছি না । ধান নিয়ে গুদাম মুখি হওয়ার জন্য কৃষকের উদ্দেশ্যে তিনি মাইকিং করাবেন বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজ ১৪ মে। এখন পর্যন্ত সেরকম কোন উদ্যোগ বারহাট্টায় দেখা যায় নি।

কৃষি অফিস থেকে বোরো ধান বিক্রয়ে আগ্রহী কৃষকের তালিকার কয়েকজন কৃষকের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় তাদের নাম এই তালিকায় কিভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা তারা জানেন না। কেউ কেউ বলছে সে কোন কৃষকই না। আবার কেউ কেউ জানিয়েছে তারা এলাকায় থাকে না।

বারহাট্টা সদর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর ব্লকের ৬ নং তালিকা ভুক্ত রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কোন জমিজমা নেই। আমি অন্যের জমি করে সামান্য খোরাকী পেয়েছি। আমার নাম কিভাবে অন্তর্ভুক্ত হলো আমি জানি না।

চিরাম ইউনিয়নের নৈহাটি ব্লকের বজলু তাং বলেন,আমি অল্প ধান পাই। কোন দিনই গুদামে ধান বিক্রি করি নি। একই বক্লের ৫ নং কৃষক গোলাম মোস্তফার ছেলে আলম মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের লিষ্টের ব্যপারে আমাদের কিছু জানা নেই। আমাদের জমি আছে কিন্তু আমরা মাত্র খোরাকীর বুঝ জমি করেছি। বিক্রি করার মত ধান নেই। কৃষি অফিসের লোকজন বাজারে বসে বসে মুখ দেখে দেখে এই সব লিষ্ট করেছে।

নৈহাটি গ্রামের মোস্ত মিয়া বলেন, আমি যা ধান পেয়েছি এগুলো আমার খাওয়ার জন্যই যথেষ্ট হয় না বিক্রি করবো কোথায় থেকে?

এই বক্লের ১০ নং কৃষক দুলাল মিয়াকে ফোন দিলে ঢাকা থেকে রেহান মিয়া নামে এক ভদ্রলোক ফোন রিসিভ করে বলে আমি রিকশায় আছি।

আসমা ইউনিয়নের গুমুরিয়া ব্লকের ২ নং কৃষক জুয়েল মিয়া বলেন, আমি কোন কৃষক নই। তবে নাম টা হয়তো কেউ দিয়েছে।

সিংধা ইউনিয়ন চন্দ্রপুর ব্লকের কৃষক তালিকার ৯ নং ব্যক্তির নাম্বারে ফোন দিলে তিনি বলেন, তালিকায় কেমনে নাম দেয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না। একই ব্লকের ২ নং তালিকা ভুক্ত ব্যক্তি কে ফোন দিলে ছাইকুল মিয়া নামের এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে বলেন, তালিকায় কেমনে নাম আসলো তার জানা নেই।

এছাড়া রায়পুর, সাহতা, বাউসী সহ সাত ইউনিয়নের যাদের সঠিক নাম আছে তারাও জানেন না কবে নাগাদ গুদামে ধান কেনা শুরু করবে আর কবে শেষ হবে।

গ্রামের সহজ সরল কিছু কৃষক ভাবছে ধান কেনার সময় হলে তালিকায় দেয়া মোবাইল নাম্বারে হয়তো ফোন করবে। আবার কোন কোন কৃষক বলছেন,মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসাররা এসে দেখে দেখে কিছু কৃষককে সুবিধা দিয়ে প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করছে। তাদের দাবী প্রকৃত কৃষক সব সময় অবহেলিত। তাদের মধ্যে যাদের গুদামে ধান বিক্রির অভিজ্ঞতা আছে তারা বলছে গুদামে ধান নিয়ে যাওয়ার পর ভাল ধান-ও খারাপ হয়ে যায়।

খাদ্য গুদামে কৃষক কর্তৃক ধান বিক্রির আগ্রহী তালিকা থেকে মাত্র ত্রিশ টি নামের তালিকা যাচাই করে এই রকম অনিয়ম পাওয়া গেছে বাকী গুলো জানা সম্ভব হয় নি।

বারহাট্টা উপজেলায় ১৬ জন সহকারী কৃষি অফিসার মাঠে কাজ করার পরও এমন অনিয়ম কেন হলো জানতে চাইলে বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, আমি জানি আমার সহকারী অফিসার গণ মাঠে গিয়ে কৃষকের কাছাকাছি থেকে কাজ করে। তারা মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাছাই করে কৃষকের তালিকা দেয়ার কথা। সেই ক্ষেত্রে তারা যদি ইচ্ছাকৃত অনিয়ম করে তাহলে অবশ্যই তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খবিরুল আহসান বলেন, এই রকম অনিয়ম যদি কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories